সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন
বাড়ছে সঞ্চয় ভাঙানোর চাপ

আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশের ২৪ হাজার সমবায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ মে, ২০২০
  • ২৪৮

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশের প্রায় ২৪ হাজার সমবায়ী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ছুটির কবলে এসব সমবায় প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ঋণ আদায় ও সঞ্চয় কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করা সাধারণের সঞ্চয়ের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বেকার হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৯ লক্ষাধিক কর্মকমর্তা-কর্মচারীর। অস্তিত্ব রক্ষার্থে এনজিও ঋণের মতো সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনার অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাবেক সচিব ও সমবায় অধিদপ্তরের সাবেক নিবন্ধক মো. হুমায়ুন খালিদ ইত্তেফাককে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের মতো আমরাও মহাসংকটে পড়তে যাচ্ছি। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সংকট শুরু হয়েছে। সামনে খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রায় লক্ষাধিক সমবায়ী প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখতে হবে। মিল্কভিটার মতো বিভিন্ন সমবায়ী প্রতিষ্ঠান যারা সরাসরি আয় উত্সারি কাজের সঙ্গে জড়িত, সে প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাতে এসব কাজে বাধা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সঙ্গে এনজিওগুলোর মতো সরাসরি ঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২৪ হাজার সমবায়ী প্রতিষ্ঠানকে সরকারের প্রণোদনার অর্থের আওতায় নিতে হবে।

জানা গেছে, সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত দেশের সমবায়গুলো তাদের সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় ও আমানত নিয়ে আবার সমিতির সদস্যদের মধ্যেই গাভি পালন এবং মিল্কভিটার মতো বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ঋণ দান করে থাকে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, হকার, ছোটো দোকানদার, বস্তিবাসীর মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সঞ্চয় গ্রহণ ও ঋণ কার্যক্রম, ব্যাংকে এফডিআর—সবমিলে বছর শেষে যে পরিমাণ মুনাফা হয়, তা সমিতির সদস্যদের মধ্যে আনুপাতিক হারে বিতরণ করা হয়। কিন্তু দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রেডিট ইউনিয়নগুলোর শীর্ষ প্রতিষ্ঠান কাল্ব’র সাবেক সেক্রেটারি ও দি সেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন অব খ্রিস্টান কো-অপারেটিভস লিমিটেডের চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও বলেন, এনজিওগুলোর মতো তাদেরও ঋণের ব্যবস্থা করলে প্রতিষ্ঠানগুলো সচল থাকবে। সদস্যরা ঋণের অর্থ ফেরত দিতে পারবেন।

ক্রেডিট ইউনিয়ন সম্প্রীতির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয় দেশের সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো। এর সদস্যদের জমানো অর্থ থেকেই তাদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ঋণ বিতরণ করা হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটির মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে।

সমবায় অধিদপ্তরের সর্বশেষ এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে সরাসরি ঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সমবায় সমিতির সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। এর সদস্যসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। সমিতিগুলোর সঞ্চয় আমানত রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকা এবং ঋণ আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। আর সংরক্ষিত তহবিল রয়েছে প্রায় ৯৩০ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন

আরো খবর