শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

উত্তরা গণভবনের হৈমন্তী কথা

ক্রাইম এক্সপ্রেস ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ মে, ২০২০
  • ২২১

এখন হৈমন্তীর ভরা মৌসুম। সাতটি হৈমন্তীর রূপে গন্ধে অনন্য হয়ে উঠেছে উত্তরা গণভবনের আঙিনা।

অপরূপ স্থাপত্য শৈলীর রাজপ্রাসাদ আর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা অসাধারণ সব সামগ্রীর এই সংগ্রহশালাটি যেন ফুলময়। পারিজাত, ম্যাগনোলিয়া, নাগালিঙ্গম, এগপ্লান্ট, সুরভিকা আর হৈমন্তী- এসব ফুল গাছের উপস্থিতি জানান দেয়, উত্তরা গণভবন শুধু রাজপ্রাসাদই নয় সুবিশাল পুষ্প সাম্রাজ্যও বটে।

এরমধ্যে পারিজাত চক্রাকারে পাতার রঙ পাল্টে লাল রঙের ফুলের থোকায় পরিণত হয় বসন্তে। এগপ্লান্টে প্রায় সারা বছর দু’একটা ফুল থাকলেও শীত আর বর্ষা এর ভরা মৌসুম। নাগালিঙ্গম আর ম্যাগনোলিয়া বসন্তে ফুটলেও বিস্তৃতি বর্ষাকাল পর্যন্ত। রাজার প্রিয় ফুল সুরভিকা ফোটে মূলত শীতকালে।

আর বসন্তে পাতা হারিয়ে হৈমন্তী গাছগুলো হয়ে পড়ে বিবর্ণ। বসন্তের শেষার্ধে ফুল আসতে শুরু করলেও গ্রীষ্মে হৈমন্তীর রূপ হয়ে ওঠে অপরূপ। সারাগাছ জুড়ে ফুল আর ফুল, কোন পাতা নেই। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে এ যেন শুভ্র সুন্দর শান্তির পরশ। গ্রীষ্মের এই ফুল সুবাস ছড়াবে অন্তত দুই মাস। এটিই হৈমন্তীর ভরা মৌসুম। শরতে আরো একবার হৈমন্তী শুভ্র সুন্দর হয়ে ওঠার চেস্টা করে। তবে এত ফুলের প্রাচুর্য আর সুবাস তখন থাকে না।

গণভবনের সিংহ দুয়ার পেরিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে ইতালিয়ান গার্ডেনের প্রবেশপথের আগে দাঁড়িয়ে আছে একটি হৈমন্তী। ইতালিয়ান গার্ডেনে একটি, হরিণনিবাসে একটি, সংগ্রহশালার সাথে একটি, রাজপ্রাসাদের সামনে দুইটি, আর রাণীমহলে একটি হৈমন্তী গাছ।

ধীরে বর্ধনশীল হৈমন্তীর সাতটি গাছের মধ্যে রাজপ্রাসাদের সামনের গাছটি ফুলে ফুলে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। রাণীমহলের গাছটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রোপণ করেছিলেন বলে জেলা প্রশাসন একটি ফলক দিয়েছে। সাবেক জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন এর সময়ে মৃতপ্রায় হৈমন্তী গাছটি বাঁচিয়ে তুলতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় আর নামফলক দেয়া হয়। বিগত কয়েক বছরের পরিচর্যায় মৃতপ্রায় গাছটি ফুলে ফুলে ছেঁয়ে যাচ্ছে।

তবে উত্তরা গণভবনে কর্মরত সবচেয়ে পুরনো মানুষ অবসরপ্রাপ্ত গার্ডেনার আব্দুল হাকিম অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকাকালীন জানিয়েছিলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাটোরে এসে গভর্নর হাউজকে গণভবন হিসেবে নামফলক স্থাপন করেন এবং রাজপ্রাসাদের সামনে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।

সম্প্রতি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল বঙ্গবন্ধুর রোপণ করা হৈমন্তী গাছ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। এমপি শিমুল প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত করে বলেন, নামফলক দেয়া হৈমন্তী গাছটি বঙ্গবন্ধুর রোপিত নয়। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ফুলের তালিকায় ছিল হৈমন্তী। এই গাছের তলায় প্রিয় সময় উপভোগ করেছেন তিনি, করেছেন কবিতা আবৃত্তি।

বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ফুল হৈমন্তী। তাই দর্শনার্থীদেরও প্রিয় ফুল হৈমন্তী। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায় গ্রীষ্মকালে আগত হাজারো দর্শনার্থীদের। তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়া যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থায় গণভবনে দর্শনার্থী প্রবেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তাই দর্শনার্থীদের কোলাহল ছাড়াই নীরবে রূপ গন্ধ বিলিয়ে যাচ্ছে উত্তরা গণভবনের সাতটি হৈমন্তী।

শেয়ার করুন

আরো খবর