প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী অপেক্ষায়। পরীক্ষা দিলেই করতে পারবেন করোনার এই দুর্যোগ মুহুর্তে রোগীদের সেবা। পাস করেই তারা যোগ দিতে পারবেন মেডিকেল কলেজগুলোতে। করোনা মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসকরা। এই যুদ্ধে সামিল হতে নতুন করে নেয়া হয়েছে ২ হাজার চিকিৎসক। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পুরণ করার শেষ ধাপে পৌঁছে গিয়েছিলেন তারা গত নভেম্বর মাসে। অংশ নিয়েছিলেন চুড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায়। কিন্তু অল্পের জন্য ভাগ্য বঞ্চিত হন তারা।
একটি বা দু’টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে ছিটকে পড়েন তারা। তীরে এসে তরী ডুবে যায় তাদের। তাদের বন্ধুরা এখন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। সেবা দিচ্ছেন দেশের সবচেয়ে সংকটময় মুহুর্তে। কিন্তু এরা ঘরে বসে আছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষায় অংশ নেবার জন্য। চলতি মে মাসেই হবার কথা ছিল পরীক্ষা। কিন্তু করোনাকালে সেবা দেয়ার স্বপ্নটা অধরাই রয়ে গেল। করোনা মহামারিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত মেডিকেল কলেজও বন্ধ রাখা হয়েছে। যার ফলে আটকে গেছে মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য সব কয়টি পেশাগত পরীক্ষা। সব পরীক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চুড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষা একটু আলাদা। এই পরীক্ষা হলেই একধাপ চাকা ঘুরবে হাসপাতালগুলোর। দিনাজপুরের এম, আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ দেলোয়ার হোসেন কাজল জানান যে, মে ২০২০ এর পেশাগত পরীক্ষাটি মূলত বিগত নভেম্বর ২০১৯ এ হওয়া ফাইনাল পেশাগত সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা। অন্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার তুলনায় কম ছুটি, বেশি ক্লাস এবং ৬ মাস অন্তর নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে কৃতকার্যদের চিকিৎসক হওয়ার এ ধারা বিগত কয়েক বছর ধরে মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থাকে রেখেছে সেশনজটবিহীন এবং হাসপাতালে রোগীদের সেবা প্রদানকে রেখেছে নিরবচ্ছিন্ন। এখন ঠিক সময়ে পরীক্ষা না হলে রোগীদের সবচেয়ে দুঃসময়ে চিকিৎসক তৈরির এ ধারা ব্যহত হবে। হাসপাতালগুলোতে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের সংকট হতে পারে। কিন্তু ঝুঁকির চিন্তাটা মাথায় রয়েই যায়। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান বলেন, সব হাসপাতালই খোলা আছে রোগীদের সেবায়। আমাদের শিক্ষকরাই সেখানে গিয়ে নিয়মিত রোগী দেখছেন। তাহলে বিকল্প পথে আমাদের পরীক্ষা কেন নয়? তিনি আরো বলেন, পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেজ এ ব্লক পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করে বিশেষ ব্যবস্থায় শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশন জট ঠেকাতে সেমিস্টার পরীক্ষা বাতিল করে শুধুমাত্র বিগত পারফরম্যান্সের সমন্বয় করে উত্তীর্ণ করার ব্যবস্থা করেছে। তবে আমাদেরও তাই করা সম্ভব। খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী অনিক দত্তের মতে, ফাইনাল প্রফ সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষাটি নিছক একটা সুযোগই নয়। এর উপর নির্ভর করে বিসিএস, পোস্ট গ্রাজুয়েশনসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা। এখন আমাদের সেই পরীক্ষা নেয়ায় এতো বিলম্ব হলে পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে দূরত্ব রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে, বিনষ্ট হবে মেডিকেলের স্বাভাবিক ধারা। এদিকে বিগত বছরগুলোর ফাইনাল প্রফের সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার যোগদানের তারিখ অনুসারে তাদের ট্রেনিং সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সামনেই ইন্টার্ন সংকট দেখা দেবে প্রকট। এমতাবস্থায় এসব শিক্ষার্থীরা অচলাবস্থা নিরসনে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছেন তারা- ১। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ এর ঐক্যমত তথা বিএমডিসির সার্বিক সহায়তায় অনতিবিলম্বে এম বি বি এস ফাইনাল প্রফ অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ।
২। চলমান করোনা সংকটে পরীক্ষার্থীদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্রয়োজনে পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্করণ।
৩। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদন সংক্রান্ত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রীতা সমাধানে আপাতত মেডিকেলের কলেজের তত্ত্বাবধায়নে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ।