রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:০৩ অপরাহ্ন

করোনার মোকাবিলায় আমরা কোথায়

ক্রাইম এক্সপ্রেস ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০
  • ২৭৪

গত ১৬ এপ্রিল সরকার সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর ১১(১) ধারার ক্ষমতাবলে সমগ্র বাংলাদেশকে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে: ‘বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করেছে। এ কারণে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন জায়গায় এ রোগের সংক্রমণ ঘটেছে।’এটি একটি অত্যন্ত তাৎপর্য ঘোষণা।
এ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার স্বীকার করে নিয়েছে যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ‘কমিউনিটি ট্রেন্সমিশনের স্তরে পৌঁছেছে এবং এটি গ্রামগঞ্জ, পাড়া-মহল্লা সব এলাকায়ই ছড়িয়ে পড়েছে, যদিও পর্যাপ্ত পরীক্ষার অভাবে তার ব্যাপকতা ধরা পড়ছে না। ফলে আমরা কেউই, যে যেখানেই থাকি না কেন, এর থেকে নিরাপদ নই। তাই কার্যকর ব্যবস্থার অভাবে ভবিষ্যতে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সংক্রমণ ও মৃত্যু অনিবার্য বলে অনেকের ধারণা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের বিস্তার চারটি স্তরে হয়ে থাকে। প্রথমত, বিদেশী উৎস। এ স্তরে ভ্রমনের মাধ্যমে সংক্রমণ বিদেশ থেকে আসে এবং এর প্রকোপ একটি বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ঘটনা।

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় সংক্রমণ (Local transmission)। এ স্তরে সংক্রমণের উৎস জানা এবং তা চিহ্নিত করা সম্ভব – যেমন, পরিবার কিংবা কোনো সুনির্দিষ্ট সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ। তৃতীয়ত, সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমণ (Community transmission)। এ স্তরে সংক্রমণের উৎস অজানা এবং বহু জায়গায় সংক্রমণ দৃশ্যমান। এ ক্ষেত্রে পুরো সমাজে সংক্রমণের পরিমাণ এত ব্যাপক যে, কোনো জানা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না এসেও কিংবা সংক্রমণ ঘটেছে এমন কোনো দেশে না গিয়েও যে কোনো ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়া সম্ভব। ফলে এ স্তরে দেশব্যাপী জ্যামিতিক হারে দাবানলের মত সংক্রমণের বিস্তার ঘটে, যা ইতালি, স্পেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমরা লক্ষ করেছি। চতুর্থত, মহামারি। এ স্তরে সংক্রমণ মহামারির পর্যায়ে পৌঁছে এবং ব্যাপক হারে মৃত্যু ঘটায়।

এটি সুস্পষ্ট যে, আমরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বা সীমিতকরণ (Containment) করতে পারিনি, তাই আমাদেরকে এখন প্রশমনের (Mitigation) দিকে নজর দিতে হবে। গত কয়েক মাসে বিদেশ থেকে প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশী দেশে ফিরে এসেছে, যা এখনও স্রোতের মত অব্যাহত রয়েছে। এরা অনেকে এসেছে করোনা ভাইরাসের ছোবলে জর্জরিত দেশ থেকে। এদেরকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করে কোয়ারেন্টিনে রাখা প্রয়োজন ছিল, যা আমরা করতে পারিনি। এ নিয়ন্ত্রণের অভাবে এদের মাধ্যমে সারাদেশে ভাইরাসটি সংক্রমিত হবার সুযোগ পায়।

এরপর সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি এবং এক ধরণের অনানুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষণা করে। এর ফলে এক কোটির বেশি শহরবাসী বিভিন্ন যানবাহনে গাদাগাদি করে, সামাজিক দূরত্ব না মেনে, গ্রামে ছুটে যায়। এর মাধ্যমে শহর থেকে গ্রামে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়।

সাধারণ ছুটি শেষে ৪ এপ্রিল অনেকে, বিশেষত পোশাক শিল্পে কর্মরত বহু ব্যক্তি ছোট ছোট বাহনে, এমকি হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছে জানতে পারে যে তাদের কারখানা খুলছে না। এদের মধ্যে অনেকে আবার ফিরে যায় গ্রামে। এভাবে যাওয়া আসার মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়াতে থাকে সারা দেশে। অর্থাৎ সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কঠোরতার অভাব করোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রনে রাখার ব্যাপারে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়।

করোনা ভাইরাস যে এরই মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তার প্রতিফলন দেখা যায় সরকারের প্রকাশিত সংক্রমণের তথ্য থেকে। গত ৮ মার্চ নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় এবং প্রথম দিকে তা অত্যন্ত ধীর গতিতে চলতে থাকে। কিন্তু দ্বিতীয় মাস থেকে নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমিত রোগী ও মৃতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে দ্রুত গতিতে এবং ছূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরই প্রতিফলন আমরা দেখছি নমুনা পরীক্ষার দ্বিতীয় মাসে মোট আক্রান্তের ৯৮ শতাংশের শনাক্তের মধ্য দিয়ে। আর দেশে করোনাভাইরাসের কারণে মৃতের সংখ্যা ১০০ পৌঁছেছে শনাক্ত শুরুর ৪৪ দিনে, যা ২০০ ছড়াতে সময় লেগেছে মাত্র ১৮ দিন। প্রসঙ্গত, প্রথম দিকে সংক্রমণ মূলত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সীমাবদ্ধ থাকলেও, বর্তমানে তা দেশের ৬৪ জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে।

শেয়ার করুন

আরো খবর