সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখতে দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টম হাউস চট্টগ্রামসহ অন্যান্য কাস্টম হাউস সম্প্রতি সচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে কাজ শুরু হয়েছে পুরোপুরি। বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। এ ছাড়া রাজধানী কমলাপুর আইসিডি, শাহজালাল বিমানবন্দর সংলগ্ন ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের অন্যসব কাস্টম হাউস ও শুল্ক্কস্টেশনে সীমিত আকারে কাজ শুরু হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এসব কাস্টম হাউসে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী নেই। আমদানি-রপ্তানি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্নিষ্ট অংশীজন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছেন না অনেকেই। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের কাস্টম হাউসগুলোতে পণ্য খালাস করতে গিয়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেন, অনেকেই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন। ফলে তাদের মধ্যে শঙ্কা ও উদ্বেগ কাজ করছে। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য খালাসের দাবি জানিয়েছেন। এটি নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিশেষ ব্যবস্থা ও তদারকি আরও জোরদার করার কথা বলেন তারা।
গত ২৫ মার্চ থেকে সরকারি ছুটি ঘোষণার পর সীমিত আকারে চালু ছিল কাস্টম হাউস। সম্প্রতি এই কাস্টম হাউস পুরোপুরি চালু হয়েছে। জানা যায়, করোনার মধ্যেও বর্তমানে প্রতিদিন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এক হাজার লোকের সমাগম হয়। পণ্য খালাসের জন্য তাদের আসতে হচ্ছে। সুরক্ষা বলতে আছে শুধু মাস্ক। সীমিত আকারে ব্যংক শাখা চালু থাকায় টাকা জমা দেওয়ার চাপ থাকে। ফলে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। জনসমাগম বাড়ছে প্রতিদিনই। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে। যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরে আলম বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরে আমাদের আর কী করার আছে? আমদানিকারক-রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফসহ এখানে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি লোকের সমাগম হয়। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।’
সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে মোট জনবল সাড়ে ৬০০ জন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী নেই। এ প্রসঙ্গে ফখরে আলম বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশন থেকে কিছু দিয়েছে। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে কিছু সংগ্রহ করা হযেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। ফলে অনেক কর্মকর্তাই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।’
ঢাকা কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও প্রতিদিন প্রচুর পণ্য খালাস হচ্ছে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পণ্য খালাসের চেষ্টা করা হলেও অনেকেই মানছেন না। ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘সুরক্ষা সামগ্রী পর্যাপ্ত নয়। আরও দরকার। সীমাবদ্ধতা থাকার পরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পণ্য খালাস প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয়।’
বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার থেকে খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কর্মকর্তাদের সুরক্ষা থাকলেও আমদানি-রপ্তানি কাজের সঙ্গে জড়িতদের সুরক্ষা নেই। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। অবশ্য বেনাপোলের কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেইন চৌধুরী দাবি করেন, ‘করোনা সংক্রমণ রোধে আগে থেকেই যথাযথ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোসহ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেক অংশীজন জড়িত। তারা কী সুরক্ষা নিচ্ছেন, তা জানা নেই।’
বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘কাস্টমসের সেবা সার্বক্ষণিক। করোনা দুর্যোগে কর্মকর্তারা রাজস্বযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকেই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন। রাজস্ব কর্মকর্তাদের যত বেশি সুরক্ষিত রাখা হবে, তত বেশি সেবা দেওয়া যাবে। এ জন্য আরও বেশি সুরক্ষা সামগ্রী দিতে হবে।’
কমলাপুর আইসিডি সূত্র বলেছে, পণ্য খালাস বাড়ছে। পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী না থাকায় ঝুঁকির মধ্যেও কাজ করছেন কর্মকর্তারা। কুমিল্লা কমিশনারের আওতাধীন তিনটি কাস্টম হাউসে গত সপ্তাহ থেকে পুরোপুরি কাজ শুরু হয়েছে। সেখানেও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী নেই। সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।