কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজাকরণ করে আতঙ্কে রয়েছেন খামারিরা। তাদের শঙ্কা করোনা পরিস্থিতি যদি ঈদুল আজহা পর্যন্ত স্থায়ী হয় তাহলে গরু বেচাকেনা হবে না। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।
খামারিরা বলছেন, করোনার এই ক্রান্তিকালে তারা বড় দুশ্চিন্তায় আছেন। সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে অনেকে বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তবে ঈদে তারা গরু বিক্রি করতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না তাদের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে মোট গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। সবমিলিয়ে এবারও কোরবানির জন্য ১ কোটি ২০ লাখের ওপরে গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খামারি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এবার কোরবানির আশায় ৫৮টি গরু লালন-পালন করেছি। এখন করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। তিনি বলেন, করোনার কারণে বেলকুচি উপজেলায় ভেটেরিনারি চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক না থাকার কারণে আমার ৬৫ হাজার টাকা দামের একটি গরু মারা গেছে চিকিৎসার অভাবে। এ কারণে খুব অস্বস্তির মধ্যে আছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মামুন বলেন, সারাবছর আমরা পরিশ্রম করে গরু পালন করি, কিন্তু বেশি লাভ করতে পারি না। কয়েক বছর ধরে ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ খেকে গরু কিনে অনলাইনে ছবি দিয়ে বড় লোকদের কাছে বিক্রি করে ফায়দা লোটে। আমরা খামারিরা শুধু কষ্ট করেই যাই। তার মধ্যে এবার গো-খাদ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। এ কারণে গরু পালনে খরচও বেড়ে গেছে। যদি করোনা অব্যাহত থাকে তাহলে আমার ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লস হবে। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এইবার যদি লস হয় আর গরুর ব্যবসা করব না।
শেরপুর জেলার আরেক খামারি তৌহিদুর রহমান পাপ্পু। গরু মোটাতাজাকরণ করে আতঙ্কে আছেন তিনিও। তিনি বলেন, আমরা যারা খামারি, তারা সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে কোরবানির ঈদের অপেক্ষায় থাকি। ৩-৪ লাখ টাকা বিক্রির আশায় ভালো ভালো খাওয়া দিয়ে গরু পালন করি। যদি সেগুলো কোরবানিতে বিক্রি না হয় তাহলে আমাদের প্রচুর লস হয়।
তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘করোনা কতদিন থাকবে সেটা কেউ পরিষ্কার করে বলতে পারছে না। যদি কোরবানির ঈদ পর্যন্ত থাকে তাহলে আমাদের খামারিদের দুঃখের সীমা থাকবে না। গরু পালন করতে গিয়ে অনেকে লোন করেছে। ধার দেনা করে কোরবানির আাশায় গরু পালন করছে। ফলে তারা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছে।’
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, ‘সারাবিশ্বে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমরাও সে পরিস্থিতির শিকার। তবে এখনও প্রায় তিনমাস সময় আছে। তাই এখনই খামারিদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহর রহমতে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, সমস্যা আসবে কিন্তু সেসব সমস্যা সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গো-খামারিদের রক্ষার জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। তিনি সবকিছুই সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করছেন। খামারিদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, এবার কোনবানির পশুর সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে জরিপ চলছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
গত বছর সারাদেশে কোরবানিযোগ্য প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ পশু প্রস্তুত ছিল। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশু। কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ। গত বছরের প্রস্তুতকৃত প্রায় ১২লাখ পশু অবিক্রিত থেকে যায়।