করোনা মহামারীর মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে টানাহেঁচড়ার পর ঈদের কেনাকাটার জন্য মার্কেট খুলে দেয়ার কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার জনগণের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত করছে। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স (ফৌজদারি অপরাধ)।
আজ বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) প্রদান অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ অভিযোগ করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে মার্কেট খুলে দিয়েছেন, কারণ ঈদের বাজার করতে হবে, ইকোনমিকে চালু রাখতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহলে এতদিন কী করলেন। এই যে মধ্য আয়ের দেশে চলে গেলেন, ইকোনমিতে বিশ্বের রোল মডেল হলেন। সেখানে আপনারা কী করেছেন, কেনো ইকোনমিকে ধারণ করার শক্তি উপার্জন করতে পারলেন না এই কয় দিনের জন্য। কারণ আপনারা পুরোটাই মিথ্যা কথা বলে এসেছেন, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
আজকে প্রতিটি মানুষ জীবনের ঝুঁকির মধ্যে- এমন দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টগুলো নিয়ে কী হয়েছে।
যারা সংক্রমিত হয়ে ফিরে গিয়েছিল, তারা আবার ঢাকায় ফিরেছে। পত্রিকায় নিউজ আছে যে, কুমিল্লায় সংক্রমিত হয়ে গেছেন তিন দিন আগে, তাকে তার বাসায় ঢুকতে দেয়নি তার সন্তান-স্ত্রী, তার বোনের বাসা গেছেন, সেখানে সে মারা গেছেন। জাতিকে এভাবে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া ক্ষমাহীন অপরাধ। আমিতো মনে করি, এটা ভুল নয়, ক্রিমিনাল অফেন্স। আপনারা মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের জায়গায় আঘাত করছেন। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া কী বলব আমরা?
এদেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। জীবনের অধিকার তাদের ফান্ডামেন্টাল রাইট টু লিভ। সেই জায়গায় তারা আঘাত করছেন অর্থাৎ ইউ হ্যাভ নট রাইট টু লিভ টু ডায়িং। কিচ্ছু যায় আসে না। অবস্থাটা আজকে সেরকম হয়ে গেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কী বলব, নির্বাক হয়ে যাচ্ছি। কারণ চারদিকে সরকারের ব্যাপার-স্যাপার দেখে এটাকে তুঘলকি বলব, না কি বলব বুঝতে পারছি না। তারা যেভাবে পরিস্থিতিকে একেবারে চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছেন, তা অবিশ্বাস্য। কোনো ন্যূনতম দায়িত্বশীল সরকার এইভাবে জনগণকে নিয়ে খেলা করতে পারে না।
মির্জা ফখরুল ইসলামের অভিযোগ সরকার দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী কারো কাছ থেকেই কোনো পরামর্শ নিচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছু অযোগ্য, অপদার্থ আমলা এবং চাটুকার কিছু স্বাস্থ্যসেবার কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কারও মতামত গ্রহণ করছেন বলে শুনিনি। মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে ওনারা কী করতে চাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ‘টিপটপ জেন্টেলম্যান’ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি সুযোগ পেলেই বিএনপিকে আক্রমণ করেন সুন্দর এবং তার সুললিত ভাষায়। আমি একটাই কথা বলতে চাই, আপনি যে কথাগুলো বলেন, আপনি কী সেটা পরে আবার শোনেন যে কী বলছেন। শোনা উচিত এজন্য যে, শুনলে আপনি নিজেই বুঝবেন জনগণ কথাগুলো বিশ্বাস করছে না। নিজেই বুঝবেন যে কথাগুলো সঠিক নয়। তিনি বলেন, আজকে সরকারের তরফ থেকে আক্রান্ত ও সুস্থ এবং মৃত্যুর যে ডেটা দেয়া হচ্ছে আমার তো মনে হয় না বাংলাদেশের কোনো মানুষ তা বিশ্বাস করে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, যারা এই চরম দুর্দিনে জনগণকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, বিভ্রান্ত করছে, এটা ক্রিমিনাল অফেন্স না তো কি বলব। কারণ প্রশ্নটা হচ্ছে জীবনের।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই দু:সহ অনিশ্চয়তা, ভীতি, এবং জীবনের ঝুঁকির মধ্যেও সাংবাদিকদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে, তাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। আজকে সকালেই দেখলাম, একজন কার্টুনিস্ট এবং একজন ব্লগারকে কারাগারে নেয়া হয়েছে। গতকালই দিনে দেখলাম কয়েকজন সাংবাদিককে কারাগারে নেয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কী দেশ, কী রাষ্ট্র, কী সরকার। যেই সাংবাদিককে গুম করে ফেলা হলো, তার পরিবার অস্থির হয়ে খোঁজ করেও পেল না। যখন তাকে পাওয়া গেল বেনাপোলে, তখন তাকে হাতকড়া পরিয়ে মামলা দেয়া বেআইনি অনুপ্রবেশের। আজকে সত্য প্রকাশের দায়ে সংবাদকর্মীদের কারাগারে নেয়া হচ্ছে। তারা কোনো ভিন্নমত তারা সহ্য করছে না।
বিএনপির মহাসচিব এই সময়ে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতির নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের চাকরি ফেরত দিতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ছাটাই হয়ে গেছেন এই দুঃসময়ে, অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন-টেতন বন্ধ হয়ে আছে তিন মাস যাবত। সেখানে কিন্তু সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই।
একই সঙ্গে সরকারের ৯৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনায় সাংবাদিকদের জন্য কোনো বরাদ্দ না রাখার সমালোচনা করেন। এই যে সরকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যেটাকে আমরা বলেছি যে পুরোটাই শুভংকরের ফাঁকি। সেই প্রণোদনাতে সাংবাদিকদের কথা কিছুই বলা নেই। আমি এই সভা থেকে আহ্বান জানাবো সংবাদ মাধ্যমের যারা মালিক আছেন তারা দয়া করে সংবাদ কর্মীদেরকে বেতন পরিশোধ করবেন, কাউকে চাকুরিচ্যুত করবেন না এই দুর্দিনে এবং তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হবেন। সরকারের প্রতি পরিস্কার আহবান, অবিলম্বে সকল গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিকদের মুক্তি দিন। একই সঙ্গে রাজবন্দিদেরও মুক্তির দাবিও জানান ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, কেন, এত সফল সরকার, এত রাজস্ব আয় তাদের; সেগুলো থেকে কী একটু আলাদা করে সাংবাদিকদের বিশেষ বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ দেয়া যায় না?
অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, করোনা পরিস্থিতি দিনকে দিন চরম পরিণতির দিকে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্যোগের মধ্যেও সরকারের ফ্যাসিবাদের আঘাত থামছে না। বিরোধী দলের গঠনমূলক সমালোচনাকে তারা বিকৃত করে উপহাস করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্যভাবে উপস্থাপন করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সহসভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও আতিকুর রহমান রুমন উপস্থিত ছিলেন। সবশেষে রিপোর্টারদের হাতে পিপিই তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।