বাবুছড়া বাঁশ কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরের ৯ মাসে (১ সেপ্টেম্বর থেকে ১ মে পর্যন্ত) দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় ২৮ লাখ ৪৪ হাজার বাঁশ। এই বাঁশ কাটা, পরিবহন ও লোডিংয়ে জড়িত অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। এখন বাঁশের মৌসুম চললেও কোনও কর্মব্যস্ততা নেই পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের। বেকার অবস্থায় বসে আছেন শ্রমিকরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, করোনার কারণে রাঙামাটি বনবিভাগ অফিস বন্ধ থাকায় মিলছে পরিবহন অনুমতি। এর মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নদীতে রাখা বাঁশ। বাঁশের বিপরীতে রাজস্ব পরিশোধ করা হলেও বাঁশ পরিবহন করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। নদীতে রাখা বাঁশ নষ্ট হয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে ২ কোটি টাকা।
বাঁশ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অরুন বিকাশ চাকমা জানান, বাঁশ ব্যবসার এখানকার অনেক মানুষই জড়িত। এ ব্যবসার ওপর অন্তত ৫০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। কিন্তু করোনার কারণে বিভাগীয় বন অফিস বন্ধ রয়েছে। এতে আমাদের বাঁশ পরিবহনের অনুমতি মিলছে না। এখন নদীতের পড়ে আছে প্রায় ৫ লাখ বাঁশ । এসব বাঁশ দ্রুত বিপণন করতে না পারলে সব নদীতেই পচে যাবে। সরকার বা বনবিভাগ দ্রুত বাঁশ পরিবহনের অনুমিত না দিলে আমাদের পথে বসতে।
বাঁশ দ্রুত পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে ব্যবসায়ীরা। বাঁশ ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলাম, বদিউল আলম ও মো আব্দুল্লাহ জানান, নাড়াইছড়ি থেকে অগ্রীম টাকা দিয়ে বাঁশ কিনে নিয়ে এসেছি। বাবুছড়া থেকে বাঁশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। একমাসের বেশি সময় ধরে বাঁশগুলো নদীতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কদিন পরই ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে নদীতে ঢল নামবে। এভাবে বাঁশগুলো নদীতে পড়ে থাকলে পাহাড়ি ঢলে তা ভেসে যাবে।
এছাড়া অনেকে বাঁশ কয়েকগুণ লোকসান দিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছ। প্রতিটি বাঁশ সাধারণত ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি করছি ১০ টাকায়।
বাঁশ পরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সমস্যায় আছেন এ খাতে জড়িত প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। কয়েকজন শ্রমিক জানান, বাঁশ কাটার পরে তা নদী পথে পরিবহন করে আমরা নিয়ে আসি। পরে তা আবার ট্রাকে লোড করি। কিন্তু সব এখন বন্ধ। করোনার কারণে বাঁশ কোথাও যাচ্ছে না। তাই আমাদের কোনও কাজ নেই। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের পরিবার নিয়ে না খাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বাঁশ পরিবহন চালু হলেও আমাদের আয়ের পথ খুলবে।
দ্রুত সময়ের যাতে পুনরায় বাঁশ ব্যবসা চালু হয় সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, বাঁশ ব্যবসায়ীদের নদীতে বাঁশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা যাতে বাঁশ পরিবহনের অনুমতি পায় সেই বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমি অবগত করবো।
রাঙামাটি উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম প্রধান জানান, করোনা সংক্রমণে কারণে আমাদের বিভাগীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। এতে নাড়াইছড়িসহ ৫টি রেঞ্জের বনজ সম্পদ পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে অনেক বনজ সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলেও অফিস না খোলা পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারছি না। অফিস খুললে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁশসহ বনজ সম্পদ পরিবহনের অনুমতি নেওয়া হবে।