আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও চিনি ও বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যের বাড়তি মূল্য ধরে শুল্ক আদায় করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত শুল্ক দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাড়তি শুল্ক আদায়ের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে তার সুফল মিলছে না। ফলে ক্রেতাদেরও বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনি, পেট রেজিন, পেট ফিল্মের দাম কমলেও এসব পণ্যের আমদানিকারকদের বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত ট্যারিফ মূল্যের কারণে এ বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এক মেট্রিক টন চিনির মূল্য ৩৫০-৩৭০ মার্কিন ডলার। অথচ ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩০ ডলার। অর্থাৎ ৩৫০-৩৭০ ডলার দিয়ে পণ্য কিনে ৪৩০ ডলার হিসেবে শুল্ক দিতে হচ্ছে।
একইভাবে প্রতি মেট্রিক টন পেট রেজিনের বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ৬৫০-৭০০ ডলার। অথচ ট্যারিফ মূল্য ১১৫০ ডলার। আর প্রতি মেট্রিক টন পেট ফিল্মের বাজার মূল্য ১৫০০-১৬০০ ডলার। তবে ট্যারিফ মূল্য ২০০০ ডলার।
এভাবে বাজার মূল্য থেকে ট্যারিফ মূল্য বেশি হওয়ায় এক দিকে ব্যবসায়ীদের বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের বাজারে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের দাম। যদি আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে ট্যারিফ মূল্য সমন্বয় হতো, তাহলে ব্যবসায়ীরা কম দামে বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারতেন। যার চূড়ান্ত সুবিধা পেতেন ভোক্তারা— এমনটাই দাবি ব্যবসায়ীদের।
তারা বলছেন, বাজার মূল্যের সঙ্গে ট্যারিফ মূল্য সমন্বয়ের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ করা হলেও সুফল মিলছে না। সমন্বয় না করে আগের মতোই ট্যারিফ মূল্য বেশি নির্ধারিত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগে অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি ট্যারিফ মূল্য ছিল ৩২০ ডলার। সর্বশেষ বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৫০ ডলার। অপরদিকে পরিশোধিত চিনির ট্যারিফ মূল্য ছিল ৪০০ ডলার। বর্তমানে করা হয়েছে ৪৩০ ডলার।
বাড়তি কর আরোপের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের পর থেকেই দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়তে থাকে। বাজেটের আগে গত বছরের জুনে চিনির কেজি ছিল ৫০ টাকা, যা কয়েক দফায় বেড়ে বর্তমানে ৬৫-৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ বাজেটের পর চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫-২৫ টাকা পর্যন্ত।
যোগাযোগ করা হলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ট্যারিফ মূল্যের কারণে আমাদের বাড়তি শুল্ক দিতে হচ্ছে। ট্যারিফ মূল্য সমন্বয়ের জন্য কয়েক দফা দাবি জানানো হলেও কাজ হয়নি। দুই বছর ধরে আমরা বাড়তি শুল্ক দিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, প্রতিকেজি চিনি আমদানির জন্য ২২ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে। ৩৭০ ডলারে মাল নিয়ে এলে এখানে কস্টিং (ব্যয়) দাঁড়াবে ৬৫-৭০ টাকা কেজি। যদি আন্তর্জাতিক বাজার দামের সঙ্গে সমন্বয় করে ট্যারিফ মূল্য কমানো হতো, তাহলে বাজারে এখন যে দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে ক্রেতারা তার থেকে কম দামে কিনতে পারতেন।
এদিকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহ সাজাতে বর্তমানে আসবাবপত্রে স্থান করে নিয়েছে প্লাস্টিকের রকমারি সামগ্রী। বই-খাতা, কাপড়, জুতা রাখতে প্লাস্টির র্যাক প্রায় অপরিহার্যই হয়ে পড়েছে। অতিথি আপ্যায়নে চেয়ার-টেবিল, বাথরুমে বালতি-মগের ব্যবহার হচ্ছে দেদার।
খাবার ঢাকার সরপোশ থেকে শুরু করে ডাইনিং টেবিল, ওয়ারড্রপ, আলমারি, গৃহ সাজানোর প্রায় সব ধরনের আসবাবপত্র এখন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে। গ্লাস, জগ, টি টিবিল, টিফিন বক্স, প্লেট, জার, বোল, ড্রাম, বদনা, পানির বোতলসহ গৃহের প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে প্লাস্টিকের। তবে প্লাস্টিকের সামগ্রী তৈরির কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি শুল্ক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি জসিম উদ্দিন ক্রাইম এক্সপ্রেসকে বলেন, পেট রেজিন ও পেট ফিল্মের ওপর বর্তমানে যে ট্যারিফ মূল্য রয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তার থেকে মূল্য কম। শুধু পেট না, অনেক কিছুর ট্যারিফ মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের থেকে বেশি।
তিনি বলেন, এগুলোর বাজার মূল্য নির্ভর করে তেলের দামের ওপর। যেহেতু তেলের দাম কমে গেছে, সেহেতু এগুলো দামও কমেছে। আমরা ইতোমধ্যে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি- যেন এসব পণ্যের ট্যারিফ মূল্য রেফারেন্স ভ্যালুতে না ধরে বাজার মূল্যে ধরা হয়।
তিনি বলেন, ট্যারিফ মূল্য আপডেট না করার কারণে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়ছে। এর কারণে আমরা ব্যবসায়ীরাও সমস্যার মধ্যে রয়েছি। ট্যারিফ মূল্য সমন্বয় করা হলে আমরা ভোক্তাদের আরও কম দামে পণ্য দিতে পারতাম। আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে তেলের দাম ছিল ৮০-৯০ ডলার, তা কমে ২০-২২ ডলারে নেমে এসেছে। তেলের দামের ওপরেই তো এসব পণ্যের মূল্য নির্ভর করে।