মেহেন্দিগঞ্জে নারী-মাদক, সরকারী গাছ আত্মসাৎ , ঘুষ-দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পাহাড় কাঁধে নিয়ে বানাড়ীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে বদলি হয়ে এলেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। গত এক সপ্তাহ পূর্বে বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যম জানতে পারা যায়, তাকে বানারীপাড়া বদলি করা হয়েছে। বরিশাল সিভিল সার্জন মহোদয়ের অফিস স্মরক নং সিএসবি/প্রশা/২০২০/১১১৫/১(৭) তারিখ ২৮/৪/২০ মোতাবেক আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রশাসনিক বদলি করে বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে বহাল করায় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ এম এস রমিজ আহম্মেদ স্বাক্ষরিত অফিস স্মরক নং উ স্বাক/মেহে/২০/৩৫২(৭) গত ৩০/৪/২০ ইং তারিখ অপরাহ্নে ছাড়পত্র প্রদান করে অনতিবিলম্বে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে যোগদান করতে বলা হয়। তার বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি ৬ টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে এই পানিসমেন্ট বদলি করা হয়। এই অভিযোগের ভিত্ত্বিতে মামুনের বিরুদ্ধে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করা হবে। মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা
স্বাস্থ্যকম্প্লেক্সের অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহে অফিসে এসে সবাই জানতে পারে বহুমুখী অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন বদলি হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, পরিসংখ্যানবিধ আব্দুল্লাহ আল মামুন’র বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারী, অফিস চলাকালীন সময়ে মাদকদ্রব্য সেবন, সরকারী গাছ আত্মসাৎসহ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। এর মধ্যে তিনি সরকারী নিয়মনীতি না মেনে নিজের ইচ্ছেমত অফিস করেন, বায়োমেটিক হাজিরা প্রেরণ করা তাহার নির্ধারিত কাজ হলেও তিনি তা করেন না, অফিস চলাকালীন সময়ে অধিকাংশ সময় তার মোবাইল বন্ধ থাকে, উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জরুরী কাজেও তাকে মোবাইলে পায়নি। তার বহুমুখী অনিয়ম-দুর্ণীতির কারনে ইতিপূর্বে বরিশাল সিভিল সার্জন অসংখ্যবার কারন দর্শানোর কৈফিয়ত তলবসহ বেতন বন্ধ করে ছিলেন। কিন্তু তাতেও তার কোন আমুল পরিবর্তন আসে নি। ছয়টি অভিযোগের একটি হচ্ছে
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেহেন্দিগঞ্জ হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাশিয়ারকে অফিস চলাকালীন সময়ে প্রকাশ্য সন্ত্রাসী কায়দায় মারধর করেন, যা তৎসময়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ করা হয়। নিজ অফিস কক্ষে বসে প্রায় সময়ে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল ইত্যাদি সেবন করেন। যার কারনে তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়। লোকমুখে হাসপাতালের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়। সারারাত হাসপাতালের অফিসকক্ষে মাদক সেবনসহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থেকে ফজরের আযানের সময় বাড়ি ফিরেন। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর একটি অভিযোগ কাজিরচর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি এক নারীকে কুপ্রস্তাবসহ যৌন হয়রানী করেন যা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন ওই সিএইচসিপি। তৃতীয় অভিযোগ হাসপাতালের গাছ দিয়ে নিজ বাড়ির ফার্নিচার তৈরি করেন। ৪র্থ অভিযোগ হাসপাতালের জলাতঙ্ক বিষয়ক প্রশিক্ষনের টাকা আত্মসাৎ করেন।
এছাড়াও মহামারীর সময় তিনি হাসপাতালে ধারাবাহিক অনুপস্থিত ছিলেম। স্থানীয় হওয়ায়, প্রভাব বিস্তার করে দীর্ঘদিন সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা, অফিসের ডাক্তার এবং কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং গালমন্দ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নিজে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে ব্যবসার অংশিদার হওয়ায় হাসপাতালের আল্ট্রা মেশিনসহ ল্যাবের যাবতীয় পরিক্ষা নিরীক্ষা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নষ্ট দেখানো হয়। তার অসাধচারনে অনেক ডাক্তার অন্যথায় বদলী হয়ে গেছেন। ঠিকাদারকে বাধ্য করে গত বছর হাসপাতাল সংস্কার কাজ নিজে নিয়ে নামে মাত্র করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন। তার অনিয়ম-দুর্ণীতি আর স্বেচ্ছাচারীতা এতটা বেপরোয়া ছিলো যেন লাগামহীন ঘোড়ার ন্যায়। গত এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে মামুন’র অপরাধ’র ফিরিস্তি তুলে ধরে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করা হয়। মেহেন্দিগঞ্জের সচেতন মানুষ দাবি করেন, তার বদলি নয় আত্মসাতসহ সকল অপরাধের তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে। কারণ এই দুর্নীতিবাজ পরিসংখ্যানবিদ যেখানে যাক না কেন দুর্নীতি করে দেশের ক্ষতি করবে। ঠিক তাই করেছে
বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকম্প্লেক্সে যোগদান করে। তার বদলি অনুযায়ী ৩ তারিখ বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে যোগদান করার কথা। তিনি যোগদান করে তিন দিনের ছুটি নিয়েছেন। সে মতে ৪ তারিখ থেকে তিন দিন ছুটি হলে ৬মে তার ছুটি শেষ। সেমতে ৭ তারিখ তার অফিস করার কথা। কিন্তু সে ৭ তারিখ বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সে যোগদান না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ বিষয় বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা কবির হাসান বলেন সে যোগদান করে ছুটি নিয়েছেন। কয়দিনের নিছেন সে প্রসংগে তিনি নির্দিষ্ট তারিখ বলেন নি। কতদিন নিয়েছেন সে প্রসংগেও তিনি নির্দিষ্ট করে বলেন নি। তবে অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল মামুন এ প্রতিবেদকের কাছে অকপটে তিন দিন ছুটি নিয়েছেন বলে জানান।
ছুটি কবে শেষ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন সেটা অফিস থেকে জেনে নিন। পাশাপাশি বানারীপাড়া অফিস থেকেও জানানো হয় তিনি ৩ দিনের ছুটি নিয়েছেন।বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কম্প্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী ও মামুনের যোগদানের তারিখ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেননি। তিনি বলেন জাফর সাহেব নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবেন। জাফর সাহেবকে একাধিকভার ফোন দিলে তিনি হয়তো ব্যস্ততায় ধরতে পারেন নি। তবে অফিস থেকে জানা যায় তিনি ৪ তারিখ যোগদান করেছেন। তাহলে প্রশ্ন এখানে পানিস্টমেন্ট জনিত বদলিতে নির্ধারিত তারিখেই যোগদান করতে হবে। তাহলে সে ৩ তারিখ কোথায় ছিল। ৩ তারিখ যোগদান না করে থাকলে সেটা তো বড় অপরাধ। আর যদি ৩ তারিখ যোগদান করে থাকেন তাহলে ৭ তারিখ তার অফিস করার কথা। তা না করে সে অফিস ফাকি দিয়েছে। তাই তদন্ত পূর্বক এই অপরাধের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সবার দাবী তা না হলে বানারীপাড়া উপজেলা কম্প্লেক্সে ও সে অনিয়মের রাজ্য কায়েম করবে যেমনটা মেহেন্দিগঞ্জ করেছিল।