চট্টগ্রাম নগরের টেরিবাজারের গুদামে এক যুবককে বেধড়ক পেটাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। পাশেই একটি খাট। তাতে মশারি টানানো। গত বুধবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানার এএসআই কামরুল হাসানের হাতে মারধরের শিকার হয়ে গিরিধারী চৌধুরী নামের ষাটোর্ধ্ব এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভিডিওর ওই নিপীড়কও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কামরুল হাসান। যাকে পেটানো হচ্ছে তিনি টেরিবাজারের একটি মুড়ির দোকানের কর্মচারী অপু পাল। শুধু অপু পাল কিংবা গিরিধারী নন, এএসআই কামরুলের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন অন্তত একজন ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি। লোকজনকে পেটানো ও আটকে রেখে টাকা আদায় করায় যেন তার নেশা।
কোতোয়ালি থানার বক্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়িতে গিরিধারী চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগ। গত শুক্রবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। প্রতিবেদনে এএসআই কামরুল বিভিন্নজনকে নিপীড়ন করেছেন তার তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান বলেন, ‘তদন্তে গিরিধারী চৌধুরীকে পেটানোর কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে তার সঙ্গে টানাহেঁচড়া হয়েছে। দোকানের আরেক কর্মচারী ও রিকশাচালককে পেটানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ধরনের অপেশাদার আচরণের কারণে এএসআই কামরুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্তে ভাইরাল হওয়া মুড়ির দোকানের কর্মচারীকে পেটানোর ভিডিওর সত্যতা পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল নগরের টেরিবাজার মোহাদ্দেছ মার্কেটের প্রার্থনা বস্ত্রালয়ের ম্যানেজার গিরিধারী চৌধুরীর মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠেছে, এএসআই কামরুল হাসানের মারধরের শিকার হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ওই দিন মারধরের শিকার হওয়া অন্য কর্মচারী নিখিল দাশ সমকালকে জানান, পাইকারি এক ক্রেতাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শাড়ির দুটি বস্তা রিকশায় তুলছিলেন গিরিধারী ও নিখিল। এ সময় মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী মাসুদুল আলম তাদের বাধা দেন। মাসুদ এএসআই কামরুলকে খবর দেন। কামরুল এসে নিখিল, গিরিধারী ও রিকশাচালককে পেটান।
গিরিধারী চৌধুরীর ছেলে পরেশ চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ওই দোকানে কাজ করেছেন। তিনি তো চোর-ডাকাত নন। তাকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে কেন। বাবাকে হত্যার বিচার দাবি করছি।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল নগরের হাজারী গলি এলাকা থেকে আশীষ মহাজন নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করে টেনেহিঁচড়ে বক্সিরহাট পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান এএসআই কামরুল হাসান। পরে তার স্বজনরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালে তাকে ছেড়ে দেন তিনি। ২০১৯ সালের ২৪ মে রাতে নগরের লালদীঘির পাড়ের জাহেদ বোর্ডিং থেকে পাঁচ যুবককে ধরে নিয়ে যান এএসআই কামরুল হাসান। তাদের ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা আদায় করেন তিনি। পরদিন ছেড়ে দেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক এএসআই কামরুল হাসান বলেন, ‘দায়িত্বের কারণে অনেক অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা এখন সুযোগ পেয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমি কখনও কাউকে মারধর করিনি। কারও কাছ থেকে টাকাও নিইনি। যে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে, এটি মাস দেড়েক আগের ঘটনা।