রাজশাহী মহানগরীর শিক্ষা স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল গড়ে চার থেকে সাড়ে চার হাজারে ওঠানামা করে। গত ফেব্রুয়ারিতে চার হাজার ৩০০ টাকা ও মার্চ মাসে পাঁচ হাজার ২০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। অথচ পুরো এপ্রিল মাস প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৬৬ হাজার ৩৫ টাকা! শুধু ওই প্রতিষ্ঠানই নয়, নগরীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের এমন অস্বাভাবিক ভূতুড়ে বিল করেছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। নেসকোর এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মহানগরবাসী। বিদ্যুৎ বিলের টাকার পরিমাণটি গ্রাহকদের কাছে ভৌতিক হলেও বাস্তবে এমনটি হয়নি! জেনেশুনে নির্ধারিত ‘লজিকে’ পাঠানো হয়েছিল বিলগুলো। কর্তৃপক্ষের মতে কোনো কোনে ক্ষেত্রে ছিল ‘প্রিন্টিং মিসটেক’।
নগরীর শিক্ষাস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইব্রাহীম হোসেন বলেন, নেসকোর বিদ্যুৎ বিলের ওপর লেখা রয়েছে ‘দেশ প্রেমে শপথ নিন, দুর্নীতিকে বিদায় দিন’, কিন্তু নেসকো দুর্নীতি ও ভুলে চললেও কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না। বিদ্যুৎ বিল সামান্য কমবেশি হতে পারে। কিন্তু এতো কমবেশি মেনে নেওয়া যায়!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটার রিডিং না দেখেই মনগড়া বিদ্যুতের বিল করায় এমন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এর সত্যতা স্বীকারও করেছেন নেসকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নেসকোর একটি সূত্র জানায়, রাজশাহীতে নেসকোর প্রায় দুই লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে অনেক গ্রাহকই এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, অধিকাংশ গ্রাহকেরই বিদ্যুতের বিল বেশি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হলেও মিটার রিডিং দেখা হয়নি। অফিসে বসে মনগড়াভাবে তৈরি করা বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকরা পেয়েছেন। এতে দেখা গেছে মার্চ মাসে যে গ্রাহকের এক হাজার টাকা বিল এসেছে, এপ্রিল মাসে তা এক হাজার ৫০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে হয়েছে তার উল্টো।
নগরীর তালাইমারীর গ্রিন ফিল্ড স্কুলের পরিচালক ইমদাদুল হক যে বাসায় ভাড়া থাকেন, সেই বাসার দুইটি মিটারের বিলে এসেছে মাত্র ২৭ ও ২৯ টাকা। নগরীর ১৩নং ওয়ার্ডে হাওয়ানূর বেগমের একটি মিটারে ফেব্রুয়ারি মাসের বিল এসে মাত্র ২৭ টাকা। অথচ নিয়মিত বিল আসে গড়ে ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে।
এদিকে নগরীর ষষ্টিতলা মসজিদের সামনের বাড়ির মালিক জাহিদ হোসেনের বাড়িতে মার্চ মাসে বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এপ্রিল মাসের বিল দেওয়া হয়েছে তিন হাজার ৫০০ টাকা। তিনি ওই বাড়িটি ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝিতেই শিক্ষার্থীরা চলে গেছেন। যার কারণে সন্ধ্যার লাইটটিও জ্বলে না তার বাসায়। তারপরও বিপুল বিল দেখে তিনি হতবাক।
এ বিষয়ে নেসকোর ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিতরণ) বলেন, করোনায় সামাজিক দুরত্ব মানার কারণে মিটার রিডাররা বাড়ি যেতে পারে নি। অফিসে বসেই আগের বিলের সাথে ১০ ভাগ যোগ করে নতুন বিল তৈরি করে দিয়েছে। আর অনেকক্ষেত্রে হয়তো প্রিন্টিং ভুলের কারণে বিলের কমবেশি হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।