কান চলচ্চিত্র উৎসবে গত বছর মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছিল ইরানি সিনেমা ‘হলি স্পাইডার’। তখন সিনেমার গল্প সংক্ষেপে শুধু এটুকু জানা গিয়েছিল, ইরানের মাশাদ নামের এক শহরের যৌনকর্মীদের নিয়ে ঘটনা। এটুকু সিনেমাটিকে আলোচনায় নিয়ে আসে। কারণ, ইরানে যৌনকর্মী রয়েছেন, তখনো অনেকের অজানা ছিল। ইরানের প্রেক্ষাপটে সিনেমায় কীভাবে ঘটনাটি তুলে ধরা হয়েছে, সেটা দেখার জন্য তুমুল আগ্রহ ছিল দর্শক, সমালোচক ও চলচ্চিত্র পরিচালকদের। স্বর্ণপাম দরে মনোনীত সিনেমাটি ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের পর থেকে আলোচনায় আসে। সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে উঠে আসে ‘হলি স্পাইডার’ এক সিরিয়াল কিলারের গল্প, যিনি একের পর এক যৌনকর্মীদের খুন করেছিলেন।গল্পটি বেশ সাদামাটা। চেনা ছকে এগিয়ে চলা কাহিনি একসময় মানবিক প্রশ্নের মুখোমুখি করে। মানবিক থেকে রাজনৈতিকসহ নানা ঘটনা পরতে পরতে মূল গল্পের সঙ্গে যোগ হয়, যা গল্পকে আরও বেশি সময়োপযোগী ও শক্তিশালী করে। ফ্রান্স ২৪ সে সময় লিখেছিল, ‘ইরানের সমাজব্যবস্থায় কেন নারীরা যৌন পেশায় জড়িয়ে যাচ্ছেন, দেশের বেকারত্ব, কেন অপরাধ বাড়ছে, কেন অনিশ্চিত জীবন, নেশায় আসক্ত হচ্ছেন বহু নারী; সেটা আলাদা করে গল্পে আর বলে দিতে হয় না। গল্পের ছক ও পরিচালকের চিত্রনাট্যের নৈপুণ্যে সেগুলো সিঁড়ির মতো ওপরে উঠে গেছে।’
আরো পড়ুন : দক্ষিণ কোরিয়ার পপ গায়িকা হাইসুর মরদেহ উদ্ধার
সিনেমার গল্প বর্ণনার ধরন দেখে নুরি বেলগি জিলানের ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন আনাতোলিয়া’, দার্দেন ব্রাদারসদের ‘দ্য আননোন গার্ল’ সিনেমাগুলোর কথা মনে হতে পারে। ‘হলি স্পাইডার’ সিনেমায় গল্প উপস্থাপনার কৌশলে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছেন পরিচালক আলী আব্বাসী। সিনেমার প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী জার আমির ইব্রাহিমি। তাঁকে দেখা যাবে সাংবাদিক চরিত্রে। যিনি তেহরান থেকে এসেছেন সিরিয়াল খুনির ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করতে। কিন্তু শুরুতে হোঁচট খেতে হয়। নারী হিসেবে তাঁর বুকিং করা হোটেলে রুম দেওয়া হবে না। কারণ, তিনি একা। ইরানি সমাজের নিয়মে হোটেলে একা কোনো নারী থাকতে পারবেন না। তাই সরাসরি হোটেলের রিসিপশন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের ভুলে বুকিং বাতিল হয়েছে। পরে অবশ্য সাংবাদিক পরিচয় দিলে রুমটি মিলে যায়।ইরানের বড় এক শহর মাশাদ। সে শহরে রাত যত গভীর হয় রাস্তার পাশে যৌনকর্মীদের সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে। তাঁদের টার্গেট করত সায়িদ হানাই নামের এক লোক। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে রাতে শহরের রাস্তায় ঘুরতেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যৌনকর্মীদের টাকার বিনিময়ে রাত কাটানোর প্রস্তাব দিতেন। তারপর বাসায় নিয়ে সেই নারীদের খুন করতেন। পরে সেই লাশ শহর থেকে দূরে ফেলে দিতেন। ২০০০ সালে ইরানজুড়ে তুমুল আলোচনা তৈরি করে এ ঘটনা। সেই সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত সিনেমাটিতে যেমন সত্য আছে, তেমনি কিছু আছে ফিকশন, যা সিনেমাটিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করেছে।একের পর এক যৌনকর্মীদের খুন করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুনিকে খুঁজে পাচ্ছে না। নাকি খুঁজছে না, সেটাও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। ইব্রাহিমি একসময় খুনের ঘটনা নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন ঘটনার পেছনের আড়ালে থাকা ঘটনা বেরিয়ে আসে। তাঁরা খুনির চেয়ে বরং নারী সাংবাদিককে সাবধান করতে বেশি তৎপর। হুমকিও বটে। ইব্রাহিমির সঙ্গে তাঁর বসের কী হয়েছিল, সেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের জানা। তাঁদের ভাবসাবে ইব্রাহিমি একসময় বুঝতে পারেন, ঘটনা তদন্তে নিজেকে জড়াতে হবে। তিনি খুঁজে বের করতে থাকেন যৌনকর্মীদের। তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
আরো পড়ুন : দক্ষিণ কোরিয়ার পপ গায়িকা হাইসুর মরদেহ উদ্ধার