২০১৫ সালের কথা। উগান্ডার যুদ্ধবিধ্বস্ত উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দেশটির তিন যুগ ধরে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইয়োয়েরি মুসেভেনি। সেসময় তাকে উদ্দেশ্য করে একটি গান লিখেছিলেন অঞ্চলটির বাসিন্দারা। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া গানটির কথা ছিল, ‘প্রিয় প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি। আমরা আপনাকে এখানে পেয়ে খুশি। আমরা দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করি, বিদ্রোহীদের হাতে মারা পড়ি, তবু সবাই খুশি।’২০১৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে ধারাবাহিকভাবে আফ্রিকার অন্যতম সেরা বসবাসযোগ্য স্থান হিসেবে ঠাঁই করে নিচ্ছে উগান্ডা। এ অঞ্চলের অন্যতম সুখী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয় তারা। ওই বছর বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ৯০তম ও আফ্রিকার মধ্যে ২৩তম সুখী এবং বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সেরা বসবাসযোগ্য স্থানের স্বীকৃতি পেয়েছিল উগান্ডা।একইভাবে, জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২১-এ পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে সুখী দেশের খেতাব পায় উগান্ডা। সে বছর বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান ছিল ৮৩তম। ২০২২ সালের রিপোর্টেও পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে সুখী দেশ ছিল উগান্ডা। তবে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে ১১৭তে চলে যায় তারা। ২০২৩ সালে পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে সুখী দেশের খেতাব হারালেও বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে বেশ উন্নতি হয়েছে উগান্ডার। এ বছর বিশ্বের মধ্যে ১১৩তম সুখী দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে তারা, যা বাংলাদেশের চেয়ে পাঁচ ধাপ ওপরে।
আরও পড়ুন:দেশের ১০ ভাগ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে : গবেষণা
উগান্ডার প্রধানমন্ত্রী রবিনা নাব্বাঞ্জা অবশ্য দাবি করেছেন, মুসেভেনির দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই উগান্ডাবাসী সুখী। ২০২২ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি ৩৫ বছর (বর্তমানে ৩৬ বছরের বেশি) ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। (এই সময়ে) উগান্ডাবাসী অনেক কিছু অর্জন করেছে। সারা দেশে শান্তি বিরাজ করছে। মানুষ দিনে-রাতে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় অবাধে যেতে পারে। ভালো নেতৃত্বের কারণেই বেশিরভাগ উগান্ডাবাসী সুখী।স্থানীয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ডেভিড মুসেঞ্জের মতে, বিশ্বের যে কয়টি দেশে ভুট্টা, সয়াবিন, বাজরার মতো ফসল বছরে দু’বার ঘরে তোলা যায়, তার মধ্যে অন্যতম উগান্ডা।তিনি বলেন, উগান্ডা হলো পূর্ব আফ্রিকার ‘খাদ্য ঝুড়ি’। এটি সারা বছর প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভুট্টা, সয়াবিন, চীনাবাদাম ও কলা রপ্তানি করে। এখানে অনেক হ্রদ রয়েছে, যেখান থেকে মানুষ নির্বিঘ্নে যেতে ও মাছ ধরতে পারে। আমাদের অনেক বন ও বেশ কয়েকটি জাতীয় গেম পার্ক রয়েছে।
উগান্ডার কৃষিমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক তুমওয়েবেজও বলেছেন, দেশটির উর্বর মাটি ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার কারণেই উগান্ডাবাসী সুখী।সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায় উগান্ডান প্রেসিডেন্ট মুসেভেনি বলেছেন, সুখী হওয়া ভালো। তবে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে উন্নয়নের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করাও যুক্তিযুক্ত।
আরও পড়ুন:মোবাইলে লুডু জুয়া: ৭ জুয়াডি গ্রেফতার