চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন জিডিআই যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময়
বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩
২৩
চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) যোগ দেওয়ার প্রস্তাব সক্রিয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চীন এরই মধ্যে জিডিআইয়ে বাংলাদেশের সম্ভাব্য যোগ দেওয়া সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) চূড়ান্ত খসড়া পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এখন সেই খসড়া যাচাই-বাছাই করছে।এদিকে চীনের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়াইডং আগামীকাল শুক্রবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন।পরদিন শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুর পাশাপাশি জিডিআই নিয়েও আলোচনার আরো অগ্রগতি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন।‘বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নকে উৎসাহিতকরণ ও উন্নয়ন সহযোগিতা জোরদারকরণ’ শীর্ষক সম্ভাব্য এমওইউটি দুই দেশের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে কার্যকর হবে। প্রাথমিকভাবে এমওইউটির মেয়াদ ধরা হয়েছে দুই বছর। মেয়াদ শেষের আগে ছয় মাসে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে লিখিতভাবে সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা না জানালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর মেয়াদ দুই বছর করে বাড়বে।আরো পড়ুন: বিএনপির ৪০০ থেকে ৫০০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে উভয় পক্ষ তাদের সম্পর্ককে কৌশলগত মাত্রায় উন্নীত হওয়ার ঘোষণা দেয়। ওই সফরেই বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) উদ্যোগে যোগ দেয়। বর্তমানে এ সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে উভয় পক্ষ কাজ করছে।গত বছর আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে জিডিআইয়ের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন।বাংলাদেশ তখন জিডিআইয়ে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অগ্রগতি হয়েছে। খসড়ায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর আগে পাঠানো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ মাসের শুরুর দিকে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ ও গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভের আওতায় সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়।জিডিআই হলো চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের আরেকটি বৈশ্বিক উদ্যোগ।জিডিআইয়ে চীন অন্য দেশগুলোর উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা ও তা বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সহযোগিতার সুযোগকে স্বীকৃতি দেয়। শতাধিক দেশ ও সংস্থা এরই মধ্যে চীনের জিডিআই উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে জিডিআই নিয়ে গ্রুপ অব ফ্রেন্ডসের বৈঠকে ৬০টিরও বেশি দেশ অংশ নিয়েছিল।আরো পড়ুন: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে নাটোর থানায় মামলানাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, জিডিআইয়ে যোগ দিলে বাংলাদেশের কী লাভ আর কী চ্যালেঞ্জ সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। জিডিআই থেকে বাংলাদেশ লাভবান হওয়ার সুযোগ দেখছে। আবার জিডিআইয়ে যোগ দিলে চীনের বিরোধী বা প্রতিযোগী কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষতি হবে তা মনে করছি না।জিডিআইয়ের আওতায় স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ত্রাণ, কানেক্টিভিটি, জলবায়ু পরিবর্তন ও সবুজায়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও নীতিগত বিষয়ে সক্রিয় সম্পৃক্ততা, অভিজ্ঞতাবিনিময়, সক্ষমতা সৃষ্টি ও ব্যাবহারিক সহযোগিতায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সহযোগিতা আরো দৃঢ় করার সম্ভাব্য মাধ্যম হতে পারে জিডিআই। এর মাধ্যমে চীনের সহযোগিতা আরো বাড়বে। চীন থেকে মঞ্জুরি, সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যেতে পারে।খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, জিডিআই প্রকল্পগুলো চীনা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি বাস্তবায়নে সহযোগিতাকে জিডিআইয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের সামনে জনগণের উন্নয়নের বেশ কিছু ধারণা তুলে ধরেছে। বিশেষ করে, ২০১১ ও ২০১৪ সালে এসংক্রান্ত কিছু ধারণাপত্র তুলে ধরেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং জিডিআই ঘোষণা করেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে তৎকালীন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এসডিজি বাস্তবায়নে সহযোগিতার রূপরেখা তুলে ধরেন।