চাকরি দেওয়ার নামে এক তরুণীকে ডেকে নেওয়া হয় রাজধানীর কদমতলীর তুষারধারা এলাকায়। পরে তাঁকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার একটি বাসায়। সেখানে তিনি দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু তরুণীর ভাষ্য ও তদন্তে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে এজাহারের বক্তব্য মিলছিল না। একপর্যায়ে জানা যায়, অভিযুক্তরা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নন। বিরোধের জের ধরে তাঁদের ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় প্রতিপক্ষ।
আরো পড়ুন: প্রতিদিন রেমিট্যান্স আসছে প্রায় ৬ কোটি ডলার
এ মামলায় শেষ পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধীদের আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের দু’জন কারাগারে। কদমতলী থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা সমকালকে বলেন, এ ঘটনায় ওই তরুণীর খালা বাদী হয়ে নাজমুল ও সুমন নামের দু’জনকে আসামি করে মামলা করেন। এজাহারের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১২ মে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ নাজমুস সাদাতকে আটক করে। এজাহারে তাঁর নাম লেখা হয়েছিল নাজমুল। তবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও প্রযুক্তিগত তদন্তে জানা যায়, ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। এরপর বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্তে মূল ঘটনা বেরিয়ে আসে।ওসি জানান, তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হলে বাদী স্বীকার করেন, টাকার বিনিময়ে তিনি মিথ্যা মামলা করেছেন। পরে এ ঘটনায় জড়িত সাইম হোসেন খান ওরফে অরবিল ওরফে নাজমুল ও তাঁর সহযোগী হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা এখন কারাগারে।
আরো পড়ুন:ঝিঙা পাকস্থলী ও কিডনি ভালো রাখে
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, বাদী এজাহারে নাজমুল ও সুমন নামের যে দু’জনকে অভিযুক্ত করেছেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, বাদীর স্বামী ডেমরা থানার একটি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। আইনজীবী নিয়োগ করে তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করা, নগদ তিন লাখ টাকা ও ভুক্তভোগীকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখানোয় তিনি অরবিলের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি ভাগ্নিকে ডেকে নিয়ে কদমতলীর তুষারধারা এলাকায় পৌঁছে দেন। পরে আসামিরা তাঁকে ফতুল্লার একটি টিনশেড ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। সেইসঙ্গে পূর্বশত্রুতার কারণে নাজমুস সাদাতকে ফাঁসাতে ফেসবুক থেকে তাঁর ছবি নিয়ে প্রিন্ট করে তাতে নাম লিখে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে দিয়ে মামলা করতে বলা হয়। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী ভুক্তভোগী তাঁর খালার সঙ্গে (মামলার বাদী) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। পরে তাঁরা কদমতলী থানায় গিয়ে মিথ্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে সমকালকে বলেন, গ্রেপ্তার হৃদয়সহ দু’জন মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। পলাতক অপরজনের বাসাতেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই অপকর্মে অরবিলকে সহায়তা করে হৃদয় ও বিল্লাল। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী প্রথমে ভুল পথে তদন্তে এগোতে শুরু করলেও দ্রুতই বিষয়টি স্পষ্ট হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী তরুণী সব স্বীকার করেন। ভুক্তভোগী আদালতে জবানবন্দিতে সব উল্লেখ করেছেন। প্রকৃত আসামিদের তিনি সামনাসামনি শনাক্ত করেছেন।
আরো পড়ুন: যৌন হয়রানির অভিযোগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীর বিরুদ্ধে
এদিকে বাদী দাবি করেন, তাঁর ভাগ্নির চাকরির ব্যবস্থা করার কথা বলেই ডেকেছিল অরবিল। পরের ঘটনাক্রম সম্পর্কে তিনি জানতেন না। তবে তখন কারাগারে থাকা তাঁর স্বামীকে জামিন পাইয়ে দেওয়ার শর্তে তিনি ধর্ষণের মামলার বাদী হন। সাক্ষী হওয়ার কথা বলে এজাহারে তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া হয়।বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী প্রথমে এ মামলায় নাজমুস সাদাতকে আটক করে পুলিশ। তিনি সমকালকে বলেন, ‘অরবিলের কাছে আমি ২০ লাখ টাকা পাই। এই টাকা না দেওয়ার জন্য তিনি নানা রকম ষড়যন্ত্র করছেন। একবার গৃহকর্মীকে দিয়ে আমার বাসায় ইয়াবা রেখেছিলেন। তবে পুলিশের তদন্তে সেটি ধরা পড়ে। তিনি জাল দলিল করে আমার রেস্টুরেন্ট দখলের চেষ্টা চালান। সেটিও তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। কোনোভাবে না পেরে তিনি আমাকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চালান। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তদন্তে আমার অবস্থান মিলিয়ে পুলিশ বুঝতে পারে, অভিযোগ মিথ্যা। ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সুমন এর আগে আমার মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ায় তাঁকেও আসামি করা হয়।’
আরো পড়ুন: টাকা পাচার করেছেন বড় ব্যবসায়ীরা