বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম আবারও বাড়ালো সরকার। এবার পাইকারিতে ৮ শতাংশ এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ বাড়ানো হলো। আজ বুধবার ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন মূল্যহার কার্যকর করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি ওই মাসের প্রথম দিন থেকে কার্যকর করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখনো খুচরা বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বেড়েছিল। এছাড়া বর্ধিত হারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিও আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। সব মিলিয়ে জানুয়ারিতে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দামবৃদ্ধিতে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর খরচের বড় কোপ পড়ল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও খাত সংশ্লিষ্টরা।
এবারের মূল্যবৃদ্ধির বড় খড়গ পড়েছে হতদরিদ্র-প্রান্তিক মানুষের ওপর। এ লাইফ লাইন গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি—৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। দেশে এ শ্রেণির গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৫ লাখ। গত ১২ জানুয়ারিতে এ শ্রেণির জন্য আগের দাম ইউনিট প্রতি (কিলোওয়াট) ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির নতুন প্রজ্ঞাপনটি গত সোমবার ইস্যু করা হলেও গতকাল মঙ্গলবার জনসাধারণের জন্য প্রদান করা হয়। জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ (২০০৩ সনের ১৩ নম্বর আইন) এর ধারা অনুযায়ী ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে জনস্বার্থে ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। সংশোধিত প্রজ্ঞাপন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ায় সংশোধিত মূল্যহার অনুযায়ী আগামী মার্চে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবেন পোস্টপেইড গ্রাহকরা। আর প্রিপেইড গ্রাহকরা আজ থেকে নতুন দর অনুযায়ী বিদ্যুৎ কিনবেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের এক প্রাক্তন সদস্য বলেন, হতদরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য লাইফ লাইন শ্রেণি করা হয়েছিল। এদের বসবাস সাধারণত এক কক্ষ বিশিষ্ট ঘরে বা অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরে। দৈনিক সীমিত সময়ের জন্য একটি বাল্ব ও একটি ফ্যান ব্যবহার করে এমন গ্রাহকরা এই সুবিধা পেতেন। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ সারা দিন কাজ শেষে রাতে বাসায় ফিরে ফ্যান ছেড়ে ঘুমাতে যান। তাদেরকে সাশ্রয়ী দরে বিদ্যুৎ দিতে লাইফ লাইন গ্রাহক শ্রেণি করা হয়েছিল।
এছাড়া কৃষি উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এ খাতে বিদ্যুতের দাম সব সময়ই অপেক্ষাকৃত কম রাখা হতো। কিন্তু এবার তা হয়নি। আসন্ন বোরো মৌসুমের আগেই সার-বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদ নিয়ে এমনিতেই শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা। এর মধ্যে কৃষির সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানোয় এই শঙ্কা আরো তীব্র হচ্ছে। গত ১২ ডিসেম্বর ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা করা হয়েছিল। এবার আরো ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা করা হয়েছে। কৃষিতে মধ্যমচাপে ফ্ল্যাট রেটে ৫ টাকা ৫১ পয়সা, অফপিকে ৪ টাকা ৯৭ পয়সা এবং পিক আওয়ারে ৬ টাকা ৮৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাস্তার বাতি ও পানির পাম্পের বিদ্যুৎও দুই দফায় দাম বাড়িয়ে ইউনিট প্রতি ৮ টাকা ৪৯ পয়সা করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ফ্ল্যাট রেটে ৯ টাকা ৪১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে যা বৃহত্ শিল্পের তুলনায় মাত্র ২ পয়সা কম। বৃহৎ শিল্পে ফ্ল্যাট রেটে দর ধরা হয়েছে ৯ টাকা ৪৩ পয়সা।
সংশোধিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, লাইফ লাইন ছাড়া অন্য গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম গড়ে বেড়েছে ৫ ভাগ। আর পাইকারিতে বিভিন্ন ভোল্টেজ লেভেলে ৬ দশমিক ৫৭ থেকে ৭ দশমিক ৩৬ ভাগ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা এবং ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬২ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১২ টাকা ৩ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাইকারি বিদ্যুতের দামও এবার নির্বাহী আদেশে বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুনঃনিবন্ধন অবৈধ : আপিল প্রস্তুতে ২ মাস সময় পেলো জামায়াত