শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি কাঠমিস্ত্রি থেকে ‘পশুপাখির ডাক্তার’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩
  • ৮৭

অভাবের সংসার। নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করা সম্ভব হচ্ছিল না, দায়ে পড়েই শৈশবে কাঠমিস্ত্রির দোকানে কাজ শুরু করেন। দিনে কাজ, রাতে পড়া—এভাবে নবম শ্রেণি পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। পরে আর এগোয়নি। তত দিনে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে মোটামুটি নামডাকও হয়ে গেছে তাঁর। তাই পুরোদস্তুর কাঠমিস্ত্রি হিসেবেই তাঁর পেশাগত জীবনে প্রবেশ ঘটে। একসময় সংসার পাতেন, ব্যয় বাড়ে পরিবারের। কিন্তু সংসার চালাতে গিয়ে বারবার আর্থিক দুরবস্থায় পড়তে হয়। এভাবেই সময় গড়াতে থাকে মো. মুজিবুল ইসলামের (৪৬)।আয়–ব্যয়ে যখন হিমশিম খাচ্ছিলেন, তখনই মুজিবুল সিদ্ধান্ত নেন বিকল্প কোনো পেশায় ঢুকবেন। দিনরাত ভাবতে থাকেন। একসময় গরু পালন শুরু করেন। শুরুতে দেখলেন, প্রায়ই গরুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আশপাশে পশুচিকিৎসক না থাকায় বেশ দুরবস্থাতেই পড়েন তিনি। বহু দূরের পথ পাড়ি দিয়ে গরু নিয়ে হাসপাতালে গেলেও তাঁর অনেক টাকা খরচ পড়ত। তখনই মুজিবুল সিদ্ধান্ত নেন, পশুপাখির টিকা প্রদানকারীর কাজ শিখবেন।সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে টিকা প্রদানকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন মুজিবুল। সময়টা ২০১৩ সাল। এরপর এ পেশাকে আরও ব্যবসামুখী করতে ২০২১ সালে উদ্যোক্তা প্রকল্পে যুক্ত হন এবং প্যারাভেট হিসেবে ব্যবসা ব্যবস্থাপনার ওপর প্রশিক্ষণ নেন।বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানি শেভরনের পৃষ্ঠপোষকতায় এ প্রশিক্ষণ দেওয়ার যাবতীয় কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজ (আইডিই) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। এরপরই বদলে যেতে থাকে মুজিবুলের জীবন।

আরও পড়ুন:স্ত্রীকে শ্বাসরোধে করে হত্যা করে স্বামী পালিয়েছে মায়ের লাশ পাশে নিয়ে কাঁদছিল শিশুটি

অভাবের সংসারে আসে সচ্ছলতা। এভাবেই সুদিন ফেরে মুজিবুলের জীবনে।সিলেট সদর উপজেলার টুলটিকর ইউনিয়নের উত্তর বালুচর জোনাকি গ্রামে মো. মুজিবুল ইসলামের বাড়ি। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন বর্ধিত হওয়ার পর গ্রামটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে যুক্ত হয়েছে। স্ত্রী, দুই ছেলেসহ ১৩ সদস্যের যৌথ পরিবার তাঁর। মুজিবুল জানান, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতরসহ পশুপাখিকে তিনি নানা রোগের ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন। কৃমিনাশক ট্যাবলেট আর ভিটামিন ইনজেকশনও দেন। খবর পেয়ে তিনি যেমন বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে প্রাণীর চিকিৎসা দেন, তেমনই অনেকে গবাদিপশু নিয়ে এসে তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে যান।মুজিবুল ইসলাম জানান, প্রাণীর চিকিৎসা দিয়ে পশুপাখির মালিকদের কাছ থেকে দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়। আশপাশে কোনো পশু হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকায় প্রাণীদের চিকিৎসা সাধারণত তিনিই করে থাকেন। তবে প্রাণীর রোগ কিংবা সমস্যা যদি তিনি বুঝতে না পারেন, তাহলে বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে তিনি পশুপাখির চিকিৎসা করেন। যদি কোনো ব্যক্তি দরিদ্র হন, তবে তাঁর গবাদিপশুর চিকিৎসা তিনি বিনা মূল্যেই দিয়ে থাকেন।উত্তর বালুচর জোনাকি এলাকার বাসিন্দা রীনা গোমেজ (৩৭) বলেন, যেহেতু আশপাশে কোনো পশু হাসপাতাল নেই, তাই এখানকার বাসিন্দাদের কাছে মুজিবুলই পশুপাখির চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা। যেকোনো সমস্যায় সবাই মুজিবুলের কাছেই ছুটে যান। প্রাণী স্বাস্থ্যসেবাকারী হিসেবে এলাকায় এখন মুজিবুলের অনেক সুনাম। চিকিৎসার পাশাপাশি গবাদিপশু কীভাবে লালনপালন ও যত্ন করতে হবে, এর সুপরামর্শও তিনি নিয়মিত সবাইকে দেন।

আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে কমবে টাকা পাচার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

শেয়ার করুন

আরো খবর