‘বাজেট মূলধনি মুনাফায় কর আরোপ করা হচ্ছে– এমন খবর শুনে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অনুরোধ জানাই। বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা গেছে, এমন কর আরোপ করা হয়নি।’ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে যখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান এমন বক্তব্য রাখছিলেন, ঠিক তখনই মূলধনি মুনাফায় কর বসানোর খবরেই বড় দরপতন চলছিল শেয়ারবাজারে। গত কয়েক মাস সূচকের ওঠানামা ৫-১০ পয়েন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও মূল সূচক ডিএসইএক্স গতকাল এক দিনেই ৪০ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৩১৬ পয়েন্টে নেমেছে। এমন দরপতন গত বছরের ২০ নভেম্বরের পর বা সাড়ে ছয় মাসের সর্বোচ্চ। ওই দিন সূচক হারায় ৫০ পয়েন্ট। এমন দরপতনের কারণ লেনদেন হওয়া ৩৬৪ শেয়ারের মধ্যে মাত্র ২৫টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৫৭টির। বাকি শেয়ারগুলো ফ্লোর প্রাইসে পড়েছিল।রাজধানীর পল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে কথা বলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে শেয়ারবাজার কিছুই পায়নি। তার পরও আশাহত না হতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।এদিকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ হচ্ছে– দুপুরে এমন খবর ছড়ালে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দরপতনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক বিক্রির চাপে অধিকাংশ শেয়ার দর হারায়। যাঁরা কারণটি জানতেন না, তাঁদের কেউ কেউ রাজনৈতিক অঙ্গনে আবার খারাপ কিছু ঘটল কিনা তা নিয়েও কিছুটা উদ্বিগ্ন হন।তবে শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সরকার যে আয়কর আইনের প্রস্তাব (বিল) সংসদে তুলতে যাচ্ছে, তার একটি অনুলিপি পেয়েছেন তিনি। এ বিলের সপ্তম তপশিলের ১ ধারায় বলা হয়েছে, কোম্পানির ক্ষেত্রে মূলধনি মুনাফার ওপর কর হার হবে ১৫ শতাংশ। কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য করদাতা (যেমন– ব্যক্তি ইত্যাদি) পরিসম্পদ অর্জনের পাঁচ বছর পর বিক্রি করে মুনাফা পেলে তাকেও মূলধনি মুনাফার ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। তবে পাঁচ বছরের কম সময়ের মধ্যে কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পরিসম্পদ বিক্রি করে মুনাফা করলে, তা তাঁর মোট আয়ে যুক্ত হবে এবং মোট আয়ে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হবে।
আরো পড়ুন:৮৬ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
ওই কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার কেনাবেচা থেকে অর্জিত আয়ও মূলধনি মুনাফা। এখন কোম্পানির ক্ষেত্রে মূলধনি মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। প্রস্তাবিত আইনে ৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৫ সালে এনবিআর একটি এসআরও জারি করে শেয়ারবাজার থেকে অর্জিত ব্যক্তির মূলধনি মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহার করা হয়। প্রস্তাবিত আইন করে এ ধারা ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ নিয়ে আতঙ্ক আছে।তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর বিশেষজ্ঞ ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া সমকালকে বলেন, ‘এ নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু আছে বলে মনে করি না। প্রথমত, আয়কর আইন-২০২৩ এখনও আইন নয়; কারণ সংসদে পাস হওয়া তো দূরের কথা, উত্থাপনই হয়নি। আবার এ ধারাটি হুবহু পাস হলেও তা কার্যকর হবে না, যতক্ষণ না ২০১৫ সালে যে এসআরও জারি করে ব্যক্তির মূলধনি মুনাফার ওপর কর প্রত্যাহার করা হয়েছিল সেটি নতুন এসআরও জারি করে বাতিল করা হয়।’ তবে এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে যাবে বলে মনে করেন ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও। তিনি সমকালকে বলেন, ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ রহিত করে এ আইন হচ্ছে। ফলে আগের অধ্যাদেশের অধীন যে এসআরও জারি হয়েছে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হওয়ার কথা। আইনটি যখনই সংসদে উঠবে, তখনই শেয়ারবাজারে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে, মঙ্গলবারের দরপতন দেখে তা সহজে অনুমান করা যায়। তাই সেই ধরনের পরিস্থিতি তৈরির আগেই এ ধারা আইনে থাকবে না– সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে সেই আশ্বাস আসা প্রয়োজন। ডিবিএ সভাপতি আরও বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এমন কোনো পর্যায়ে উন্নীত হয়নি, যেখানে ব্যক্তির মূলধনি মুনাফার ওপর কর আরোপ করতে হবে। এ বাজারে এখনও বেশিরভাগ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। অন্তত ৭০ শতাংশ শেয়ারের ক্রেতা নেই। এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্বশীল মহলের কোনো নীতি-পরিকল্পনা করার সময় এগুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল।
আরো পড়ুন:ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৫ জন