মাদারীপুরে রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদ: রাজৈরে হানিফ মাতুব্বরের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

জাতীয়

মাদারীপুর প্রতিনিধি

স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতনের পর সারাদেশে বিভিন্ন অপরাধের মামলা দায়ের হয়। এসব মামলার ফাঁদে পড়া নেতাকর্মীরা এখনো আইনি প্রক্রিয়ায় জর্জরিত।

আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদারী-পুর জেলার রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণদী গ্রামের হানিফ মাতুব্বরের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক পরিচয় ও ভুয়া সাংবাদিকতার আড়ালে প্রভাব খাটিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখান এবং মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।

অভিযোগে জানা যায়, হানিফ মাতুব্বর (পিতা: তারা মিয়া) একসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন বলে এলাকায় পরিচিত। এই দুই দলের রাজনীতিতে সময়ভেদে সক্রিয় থাকার সুবাদে তিনি নিজেকে সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, রাজৈরের বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর হানিফ মাতুব্বর তাদের কাছে যান এবং দাবি করেন এই মামলাগুলো বিএনপির লোকজনই দিয়েছে, আমি বিএনপির বড় বড় নেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখি। চাইলে ৩ লাখ টাকা দিলেই আমি নাম কেটে দিতে পারব।

হানিফ মাতুব্বরের প্রতারণার ধরন মূলত তিন ধাপে গড়ে ওঠে (১) ভয় দেখানো: মামলা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চাপ দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের আতঙ্কিত করেন। (২) পরিচয় ব্যবহার: কখনো নিজেকে বিএনপির প্রভাবশালী

আতঙ্কে থাকে। বিশেষ করে যারা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন বা আছেন, তারা প্রায়ই তার টার্গেটে পরিণত হন। একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, টাকার জন্য ব্যর্থ হলে তিনি হুমকি-ধামকি দেন এবং ভুয়া অভিযোগ ছড়িয়ে তাদের

২১শে ফেব্রুয়ারীআ ন্তর্জাতিক মাতৃভাযাশ হীদ দিবস হাকিম মাতুব্বর নেতাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, আবার কখনো ভুয়া সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। (৩) আর্থিক লেনদেন: মামলার নাম কেটে দেওয়া, সংবাদ প্রকাশ না করা কিংবা প্রভাব খাটানোর নামে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগেও একাধিকবার তিনি একই কৌশলে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও প্রতারণা করেছেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা সামাজিক ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।

রাজৈরের এক আওয়ামী লীগ নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, মামলায় নাম আসার পর হানিফ এসে আমাকে বলল, ভাই চিন্তা করবেন না, আমি বিএনপির বড় বড় নেতাদের সাথে আলাপ করেছি। তিন লাখ টাকা দিলে নাম কেটে যাবে। আমি অবাক হয়ে যাই, কারণ মামলা তো আইনের বিষয়। পরে দেখি আরও কয়েকজন নেতার কাছ থেকেও একই দাবি করছে।

আরেকজন জানান, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সে ছবি তোলে, তারপর বলে, আপনার বিরুদ্ধে রিপোর্ট লিখব, যদি বিষয়টা মিটমাট করতে চান তাহলে টাকা দিতে হবে। এটা নিছক চাঁদাবাজি ছাড়া কিছুই না। এভাবেই গ্রাম শ্রীকৃষ্ণদীতে গিয়ে জানা যায়, হানিফ মাতুব্বরের নামে সাধারণ মানুষ

সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করেন। এলাকার একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ছোটবেলায় আওয়ামী লীগ করত, এখন বিএনপি করছে। আবার সাংবাদিকও বনে গেছে। আসলে সে সুযোগসন্ধানী, নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত আইনজীবীরা বলছেন, রাজনৈতিক মামলা থেকে নাম কাটা দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। এটি আদালতের বিষয়। কারও পক্ষে দাবি করা সম্পূর্ণ প্রতারণা। রাজৈর আদালতের এক আইনজীবী বলেন, এভাবে কারও কাছে টাকা দাবি করা স্পষ্ট প্রতারণা 8 ও জালিয়াতির শামিল। ভুক্তভোগীদের উচিত দ্রুত থানায় জিডি বা মামলা করা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বিষয়টি জানার পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে হানিফ মাতুব্বর সবসময় পার পেয়ে যায়। রাজৈর থানার এক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে কিছু অভিযোগ আমরা মৌখিকভাবে পেয়েছি। তবে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার আরও অনেকে জানান, হানিফ মাতুব্বর নিজেকে ভুয়া সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জনকে হয়রানি করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া

আইডি খুলে কখনো কখনো মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেন। এরপর ভুক্তভোগীদের কাছে গিয়ে টাকা দাবি করেন।

হানিফ মাতুব্বরের রাজনৈতিক ইতিহাসও বিতর্কিত। একসময় তিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয়

CNN লা  TV কথা বালরাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পরবর্তীতে সুবিধা না পেয়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আবার কখনো দাবি করেন তিনি স্বাধীন সাংবাদিক। রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য তিনি রঙ বদলের কৌশল ব্যবহার করেন বলে স্থানী-য়রা অভিযোগ করেছেন।

の এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে হানিফ মাতুব্বরকে নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মনে করেন, তার প্রতারণা হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমন মানুষদের কারণে সাধারণ মানুষ রাজনীতিকে ঘৃণা করতে শুরু করে। প্রশাসনের উচিত তাকে দ্রুত আইনের আওতায়। আনা।

রাজৈরের হানিফ মাতুব্বরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তা শুধু প্রতারণা নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা না নিলে আরও অনেকে প্রতারণার শিকার হবে বলে স্থানীয়দের আশঙ্কা। সচেতন মহল বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় পদক্ষেপই পারে প্রতারকচক্রের এ ধরনের অপকর্ম বন্ধ করতে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন রাজনৈতিক বা সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে কোনো প্রতারকের ফাঁদে না পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *